লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা

বর্তমানে গ্রীষ্মকালে গরমের আবহাওয়াতে কে রক্ষা পেতে আমরা সকলেই লেবুর শরবত খেয়ে থাকি। মুখরোচক খাদ্য যেমন গরুর গোশত, বিরিয়ানি খাওয়ার পরে  আমাদের সকলেরই লেবু শরবত প্রথম  পছন্দ। লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এটি ভিটামিন সি-এর এটি একটি উৎকৃষ্ট মানের উৎস। প্রতিটি ৫৮ গ্রামের লেবুতে ৩০ মিলি গ্রামের বেশি ভিটামিন সি থাকে। তাছাড়া লেবুতে রয়েছে ৫-৬ শতাংশ সাইট্রিক এসিড। লেবুর রস টক হওয়ার কারন হল এর পিএইচ লেভেল ২.২। লেবু অনেকগুলো খনিজ উপাদান এবং ফাইটো-নিউট্রিয়েন্টস এর উৎস। লেবু যেমন একাধারে আমাদের মানব দেহকে সতেজ করে ঠিক তেমনি এটি আমাদের অনেক গুরুতর রোগবালাই থেকে নিজেদের মুক্তিতে সহায়তা করে। কিন্তু কোনকিছুই অতিরিক্ত ভালো নয় তেমনি লেবুর যেমন উপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমনি লেবুর ক্ষতিকর দিক আছে। আমরা আজকে জানবো লেবুর রসের উপকারিতা এবং লেবুর ক্ষতিকর দিক। 

লেবুর রসের উপকারিতা

লেবু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ভিটামিন সি এর একটি উৎস। লেবুর রস আমরা অনেকে শরবত হিসেবে পান করে থাকি। আজ আমরা জানবো আমাদের দৈনন্দি মানবদেহে এই লেবুর রসের উপকারিতা।

 

১। ক্যান্সার প্রতিরোধে লেবু

আমাদের মানব দেহে ক্ষতিকারক ক্যান্সার কোষ গুলোকে ধ্বংস করার জন্য যেমন লিমোনয়েড এটি একটি খুবই কার্যকরী উপাদান যেটি লেবুতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। লেবু আমাদের দেহের ক্ষতিকারক ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করে তা নয় পাশাপাশি এটি এমন একটি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলে যার কারণে আমাদের ভবিষ্যতে ক্যান্সার কোষ তৈরি হতে পারে না। এশিয়া প্যাসিফিক জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে স্তন ক্যান্সারের প্রতিরোধের জন্য লেবুর জুড়ি মেলা ভার। ডাক্তাররা বলে থাকে হিমশীতল লেবু ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত কেমোথেরাপি থেকেও অনেক কার্যকরী। 

২। লেবুর উপকারিতা চুলের জন্য

আমাদের সকলের ব্যক্তিত্ব প্রকাশের একটি অন্যতম মাধ্যম হল চুল। এই চুল পড়া সমস্যা দূর করতে লেবুর জুড়ি মেলা ভার। প্রতিদিন লেবুর রসের প্যাক চুলে লাগালে চুল পড়া অনেকাংশে কমে যায় এবং চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। লেবুর রস আমাদের খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। লেবুর রসের সাথে পানি মিশিয়ে প্রতিদিন ব্যবহার করলে চুলের খুশকি থেকে পরিত্রান পাওয়া যায়। লেবু যেমন আমাদের চুল পড়ার সমস্যা দূর করে সাথে নতুন চুল গজায়।

৩। লেবুর রস মুখে দেওয়ার উপকারিতা

আমরা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে হরেক রকমের প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু প্রাচীনকাল থেকেই লেবু ত্বকের যত্নে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। কারণ লেবু পরিষ্কারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাই এটি ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখে। এছাড়াও লেবুতে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা ত্বকের কালো দাগ এবং পোড়া দাগ দূর করে ।কার্যকরী ফল পেতে লেবুর রসের সাথে মধু মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করা যেতে পারে। আমরা জানি লেবু ভিটামিন সি এর উৎস ভিটামিন-সি আমাদের ত্বকের কোলাজেন সিস্টেম গঠনে সহায়তা করে। বার্ধক্যজনিত শুষ্ক ত্বক এবং সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি হতে রক্ষায় লেবুর রস খুবই উপকারী।

৪। হাইপার টেনশন কমাতে লেবুর উপকারিতা

আমরা সকলেই জানি মানবদেহে পটাশিয়ামের ঘাটতি দেখা দিলে হাইপারটেনশন এবং হৃদপিন্ডের ক্ষতি হয়। পটাশিয়ামের অভাবে হাইপার্টেনশন যেমন আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় সমস্যা ঠিক তেমনি এটি আমাদের প্রাত্যহিক সুখী জীবনেও প্রভাব ফেলে। লেবুতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকায় হাইপারটেনশন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই আমাদের নিয়মিত লেবুর রস খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এতে যেমন হাইপার টেনশন থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে সাথে আমাদের হার্ট ভালো থাকবে। 

৫। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে লেবুর রস

আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভিটামিন-সি অনেক দরকারি এবং লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি সহজে আমাদের সাধারণ জ্বর কাশি সর্দি এবং জীবানুর বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ তৈরি করতে ভূমিকা রাখে। লেবু আমাদের ফুসফুস এর স্বাস্থ্য গঠনে খুবই উপকারী। যারা ফুসফুসের রোগে ভুগছেন তাদের জন্য এটি একটি আশীর্বাদস্বরূপ। পাশাপাশি লেবু আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে সামগ্রিকভাবে চিন্তা-ভাবনা করলে লেবু আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার স্তর গঠন করে এবং আমাদের বিভিন্ন রোগ জীবাণু থাকে রক্ষা করে। তাই আমাদের প্রতিনিয়ত লেবুর শরবত বা লেবুর রস খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। 

৬। হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ওজন কমাতে লেবুর উপকারিতা 

লেবুর রসে প্রচুর পরিমাণে হাইড্রোক্লোরিক এসিড রয়েছে যা আমাদের পিত্তের নিঃসরণে উৎসাহ প্রদান করে। যারা হজমজনিত সমস্যা যেমন ফোলা ভাব, পেটে কৃমি, জলন সংবেদন এবং গ্যাসের সমস্যায় ভুগে থাকেন তাদের জন্য লেবু আরাম পেতে সাহায্য করে। লেবুতে থাকা হাইড্রোক্লোরিক এসিড এর কারণে আমাদের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। 

একটি গবেষণায় দেখা যায় লেবু আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। যারা নিয়মিত খাবারের সাথে লেবুর রস বা শরবত পান করেন তাদের ওজন অনেকাংশে হ্রাস পায়।

আসুন জেনে নেই লেবুর ক্ষতিকর দিক

লেবুর উপকারিতা ঠিক যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে এর কিছু ক্ষতিকারক দিক রয়েছে। যাদের শরীরে পূর্ব থেকেই এসিডিটি জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং লেবুতে থাকে সাইট্রিক এসিড যার কারণে আমাদের শরীরে কিছু ক্ষতি হয়ে থাকে।

কোন কিছুই মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয় তাই প্রতিদিন লেবু ১০০ থেকে ১২০ মিলিগ্রাম খাওয়া যেতে পারে। লেবুর ক্ষতিকর দিকগুলোঃ 

  •  বেশি পরিমাণে লেবু খেলে যাদের এসিডিটি সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষতি হতে পারে।
  •  লেবুতে থাকে সাইট্রিক এসিডের কারণে আমাদের দাঁতের এনামেল নষ্ট হয় তাছাড়া আমাদের মস্তিষ্কে সমস্যার সৃষ্টি করে 
  • মাত্রাতিরিক্ত লেবুর শরবত খেলে আমাদের শরীরে আয়রন জমা হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য অনুউপকারী 
  • বেশি বেশি লেবু খেলে আমাদের বমি বমি ভাব হতে পারে তাছাড়া মাত্রাতিরিক্ত লেবুর কারণে অনেকের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা দেখা দেয় 

Leave a Comment